Advertisement

Viewst animation
1609242903505608758
Job Fair on 13th of July
Searching for a job?
6995220486137090000
JOIN US

বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিছে কিছু চক্র

বিগো লাইভে অশ্লীলতা


"আমার হতে চাও? আমাকে কে চাও? কেউ কি খুব ঘনিষ্ঠভাবে চাও? বেশি খরচ করতে হবে না। বিকাশে টাকা পাঠাও। তাহলে সব হবে।" এই কথাবার্তা থেকে শুরু করে বাদ থাকবে না কিছু। ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপসে তরুণীদের এমন উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিতে সরব কিছু যুবক। রাত বাড়ে, বাড়ে অশ্লীলতা।

আলো-আঁধারির পরিবেশে গানের তালে শরীর প্রদর্শন করছে স্বল্পবসনা। অনেকের শরীরে নেই কোনো কাপড়। আবার কারও কারও মুখে কড়া মেকআপ। কণ্ঠে তাদের মাদকতা। লাইভে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বলে যাচ্ছে, বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাও। তাহলে আমার নগ্ন শরীর দেখতে পাবে। আমি তোমাদের ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ভাইবারে নম্বর দেব।

সেখানে নক কর। তাহলেই আমাকে পাবে। ফোন সেক্স করলে তাড়াতাড়ি বিকাশ কর। এসব কথা বলেই একটু পরপর আড়ালে চলে যায় সেসব তরুণী। দর্শকরা যে যেভাবে পারছে বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অশ্লীল কর্মকাণ্ডে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা ভিডিও কলে লাইভ কথা বলি।

আবার দূরে যারা থাকে, তাদের সঙ্গেও জরুরি কথা বলি। অনেকদিন বাড়ির বাইরে, পরিবারের বাইরে যারা রয়েছে, প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা লাইভে কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের এ লাইভ ভিডিও কল কখনো কখনো সময় কাটানোর জন্য কিংবা মাস্তি সময় উপভোগ করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

বিগোর মতো অ্যাপসকে ব্যবহার করছে অনেকে সে কাজে। আর এই বিগো লাইভ অ্যাপস ব্যবহার করে একশ্রেণির মেয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পুরুষদের কাছ থেকে। বিশেষ করে তাদের টার্গেট থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যৌনতার ফাঁদে ফেলে তারা কৌশলে বিকাশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি যুবকদের কাছে এ অ্যাপসটি দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে কষ্টার্জিত আয়ের সিংহভাগ তুলে দিচ্ছে এই বিগো লাইভে থাকা নারীদের হাতে। কুমিল্লার রফিকুল ইসলাম জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে। সেখানে প্রতিদিন সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হন।

ঘরে ফেরেন রাত ১০টার কিছু পরে। সপ্তার সাত দিনই কাজ করেন। প্রতিদিন রফিক যখন ঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের ঘড়ির কাঁটা ১টা ছাড়িয়ে যায়। তাই পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে পারেন না। রফিক বলেন, ‘রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন বাংলাদেশ সময়ে অধিক রাত হয়ে যাওয়ায় কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করি না।

প্রথমত তাদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে, দ্বিতীয়ত এত রাতে ফোন করে তাদের কষ্টের কথা শোনালে হয়তো তাদেরও মন খারাপ থাকবে।’ গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে কী হবে, বাংলায় কথা বলার জন্য রফিক ঠিকই একটি মাধ্যম খুঁজে বের করেছেন। বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছেন বিগো লাইভ নামে একটি অ্যাপস আছে যেখানে সারারাত টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়।

বন্ধুর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর ‘বিগো লাইভ’ ইনস্টল করে ব্যবহার শুরু করেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যে আলাপ হয় মেঘবালিকা নামের একজনের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে প্রথমে ইমো নম্বর নিয়ে সেখানে কয়েকদিন ভিডিও চ্যাট করেন। একসময় নিজেদের মধ্যে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন তারা।

তবে এগুলোই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারেননি রফিক। কিছুদিন পর মেঘবালিকা তাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবি করে বলেন, না দিলে ওই নগ্ন ভিডিও তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন। বাধ্য হয়ে রফিক তাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার মাসখানেক পর আবার তার কাছে দাবি করা হয় ৩০ হাজার টাকা। তার মতো অসংখ্য প্রবাসী যুবক টাকাপয়সা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত।

তবে এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের অনেক তরুণ-তরুণী। কিন্তু বিষয়টি ‘লজ্জা’র হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য কারও সহায়তা নিতে যাননি তিনি। অ্যাপসটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, এটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়।

সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একটি বোর্ডে (ভিডিও চ্যাটে) যুক্ত হতে পারেন আটজন পর্যন্ত। তারা একই সঙ্গে নিজেদের দেখতে ও শুনতে পারেন। এ ছাড়া তাদের চ্যাটিং (ভিডিও) দেখতে পারেন অ্যাকাউন্টধারী যে কেউ। দেশে এই অ্যাপসটির ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল গল্প, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয় এখানে।

অনেকেই খুঁজতে থাকেন প্রতারণার সুযোগ। কেউ ফাঁদে পা দিলেই তার সর্বস্ব লুটে নেওয়ার উপায়ও তাদের জানা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উপদেশমূলক বক্তব্যও প্রচার করা হয় এখানে। জানা গেছে, শুধু সময় কাটানো কিংবা আগ্রহের বশে অ্যাপসটি ইনস্টল করে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রতারিতরা অ্যাপসটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

অ্যাপসটি মূলত উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, প্রবাসী, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে একাকীত্ব অনুভব করা এবং যেসব নারী বাড়িতে একা অবস্থান করেন তাদের মধ্যেই অ্যাপসটি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগো লাইভে যারা নিজেকে প্রদর্শন করে তাদের বলা হয় ব্রডকাস্টার। লাইভ রুমে যারা দর্শক থাকে তাদের গেস্ট বলে।

গ্রুপ করেও অনেক সময় একাধিক ব্যবহারকারী ব্রডকাস্ট করে। ব্রডাকাস্টাররা ইচ্ছামতো গেস্টদের লাইভে সংযুক্ত করে। অনেকে এই ব্রডকাস্টারদের নেশায় পেয়ে যায়। তাই এদের ছাড়তে পারে না। জেসমিন পুনম, বেবি, ফারিহা, সুন্দরী রুমী, মেঘবালিকা, অর্পিতা, ফ্রি কুইন, নীল শায়লা, অর্থি খান, শ্যামা চৌধুরী, কুমকুম, নিঝুম রাতের সুমি, রুপা, পুষ্প, জিনিয়া খান মিম, সোনালি কারিনা, হটগার্ল, মৌসুমি চৌধুরী এমন নামে-বেনামে আইডি খুলে বিগো লাইভের মাধ্যমে অশ্লীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ব্রডকাস্টার নারী।

এর মধ্যে কয়েকটি আইডিতে নারীবেশে প্রবাসীদের মনোরঞ্জন করছে বাংলাদেশের হিজড়ারা। যাদের মূল টার্গেট প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি যুবকরা। সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম্পত্য জীবনে হতাশা আর অশান্তিতে থাকা পুরুষদের ফাঁদে ফেলেই সর্বনাশ ঘটাচ্ছে 'বিগো লাইভ'। দীর্ঘদিন স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্নের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের টার্গেট করেও জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে অ্যাপসটিকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক এ প্রসঙ্গে এক গণণমাধ্যমকে জানান, ‘এ ধরনের ঘটনাকে আমরা বলি অনলাইন ভিকটিমাইজেশন। এখানে একজন তরুণী বা নারী যেভাবে অন্যের সঙ্গে কথা বলে তা আমাদের সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খায় না। এসব সাইট ও অ্যাপস চলতে থাকলে যুবসমাজের সামাজিক পরিচ্ছন্নতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ব্যাহত হবে। ফল হিসেবে সামাজিক সম্মানহানির ঘটনা ঘটবে। ধর্ষণ, ইভ টিজিং বাড়বে।’



-সংগ্রহীত

Post a Comment

0 Comments